নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
একের পর এক বিতর্কের জন্ম দিয়ে চলেছেন ভালুকার সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা সাইদুর রহমান। বর্তমানে তিনি খুব সতর্কতার সাথে গণমাধ্যম কর্মীদেরও এড়িয়ে চলছেন। উপজেলার দুই বিতর্কিত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সৈয়দ আহমেদ ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার দেলোয়ার হোসাইন এর দূর্নীতির প্রতিবাদে মানববন্ধন ও ঝাড়ু মিছিলের কারন অনুসন্ধানের জন্য উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক এই কর্মকর্তা মানববন্ধনের কারন অনুসন্ধানের পরিবর্তে মানববন্ধনকারীদের বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি এবং হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এসব বিষয়ে সাংবাদিকরা তথ্য নিতে তাকে ফোন করলে তিনি অফিসে গিয়ে দেখা করতে বললেও একাধিকবার অফিসে গিয়েও তার দেখা পাওয়া যায়নি। এমনকি আগে থেকে সময় নিয়ে অফিসে গিয়ে তাকে না পেয়ে ফোন করলে তিনি পরে আর ফোনও ধরেন না।
অভিযোগ আছে ভালুকা উপজেলার সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা সাইদুর রহমান কাদিগড় গ্রামের ভুমিদস্যু সাইফুল ইসলাম এর মেয়ের জামাতা রমিজ খান এবং আন্তঃজেলা মোটরসাইকেল চোর চক্রের সদস্য অভিযোগে ডিবি পুলিশের কাছে আটককৃত কাদিগড় গ্রামের আল আমিন এর পক্ষ নিয়ে দুই বিতর্কিত শিক্ষা অফিসারের দুর্নীতি এবং অনিয়ম এর বিরুদ্ধে মানববন্ধন এবং ঝাড়ু মিছিলে অংশগ্রহণকারী স্থানীয় নিরীহ সাধারণ মানুষদের ভয়ভীতি দেখান।
গত বুধবার (২৯ নভেম্বর) উপজেলার কাচিনা ইউনিয়নের ৭১ নং কাদিগড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তদন্তে গিয়ে এই ঘটনা ঘটে। এসময় ওই কর্মকর্তা স্থানীয় শিক্ষা অফিসারদের দূর্নীতির প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও রিমান্ডে নেয়ার হুমকিও দিয়েছেন বলে জানান এলাকাবাসী।
নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে সেখানে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি জানান, বিদ্যালয়ের জমি থেকে বাঁশ কাটা, জমি দখল করে পেপে বাগান করা, জলবাদ্ধতা সৃষ্টি করা সহ বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূপুর আক্তার এর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ প্রদানকারী চক্র আবুল কালাম তালুকদার, রিপন তালুকদার, ভূমিদস্যু সাইফুল ইসলাম, তার জামাতা রমিজ খান ও মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে ডিবি পুলিশ কর্তৃক আটককৃত আল আমিন কে সাথে নিয়ে তদন্ত করতে আসেন ভালুকা উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা সাইদুর রহমান।
এসময় মানববন্ধনে অংশ নেওয়া একাধিক ব্যক্তিকে স্কুলের নৈশ প্রহরী রুবেল এর মাধ্যমে বাড়ি থেকে ডেকে আনার নির্দেশ দেন তিনি। বিদ্যালয়ের জমি দখল, বাঁশ কাঁটার গুরুত্বর অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে সেই ভূমি দস্যু সাইফুল ইসলাম, তার জামাতা রমিজ খান, স্থানীয় আল আমিন, শাহালম খান, আবুল কালাম তালুকদার, রিপন তালুকদার এর সামনে একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় শাসিয়ে ভয়ভীতি দেখান ভালুকা উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা সাইদুর রহমান। এসময় পাশে থেকে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের ভয়ভীতি দেখিয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা সাইদুর রহমান এর সামনেই ভিডিও ধারন করেন রমিজ খান এবং আল আমিন গং। তাদের আরেক গং ফরিদ পাগলা কে দিয়ে এলাকায় লোকদের মাঝে আতংক সৃষ্টি করতে বিভিন্ন কথা বার্তা বলান।
অভিযোগ আছে, ভুমিদস্যু সাইফুল ইসলামের জামাতা রমিজ খানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মৎস কর্মকর্তা সাইদুর রহমান। কিছুদিন আগে সরকারি কাজের নামে পুকুর দেখতে এসে ভুমিদস্যু সাইফুল ইসলামের বাড়িতে ভুড়িভোজ করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন তিনি।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, আমি বাড়ি থেকে একটা কাজে স্কুলের সামনে দিয়ে আমার এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলাম। এসময় বিদ্যালয়ের সামনে আসতেই ভূমিদস্যু সাইফুল ইসলাম, তার জামাতা রমিজ খান, স্থানীয় আল আমিন আমাকে দেখা মাত্র বলে উঠেন, এই যে আসছে এরে ধরেন। এর ধরলে সব বের হয়ে আসবে, এই সব করাইছে। তারা এমনভাবে আমাকে উদ্দেশ্যে করে কথা বলছে যেন আমি দাগী কোন আসামী। তাদের কথায় সায় দিয়ে আমার সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন সেখানকার এক লোক। তিনি আমাকে বলেন, আমাকে চিনেন আমি কে। ইউএনও স্যার আমাকে এখানে পাঠাইছে। এখন আমিই এখানকার ইউএনও। চাইলে আপনাকে এখন এখান থেকে ধরে নিয়ে যেতে পারি। রিমান্ডে নিলেই বুঝবেন কেমনে কথা বের হয়। আমাকে কাগজে স্বাক্ষর করতে ভয়ভীতি দেখান। আমি স্বাক্ষর না করতে চাইলে তিনি আমার ফোন নাম্বার নিয়ে বলেন যখন ইউএনও ডাকবে তখন মজা বুঝবেন। মানবন্ধন করার কারন জানতে চাইলে আমি বলি, স্কুলে অনেক অনিয়ম দুর্নীতি হইছে। একটা মিথ্যা অভিযোগকে কেন্দ্র করে নূপুর ম্যাডাম কে বদলি করার জন্য চেষ্টা করা হইছে। দায়িত্ব থেকে সরাইয়া দেওয়া হইছে। এসিল্যান্ড ম্যাডাম তদন্ত করলো সেই তদন্ত প্রতিবেদন পেলাম না। বাঁশ কাটলো, জমি দখল করে পেপে বাগান করলো। তার কোন ব্যবস্থা নাই। যে ম্যাডাম স্কুলের এতো পরিবর্তন করলো তাকে সরাতে যে চক্রান্ত করা হইছে আমরা কয়েকবার গণস্বাক্ষর নিয়ে জমা দিছি। এখন এলাকার লোকজন যাকে ভালোবাসে তাকে রাখার জন্য, একটা অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানববন্ধন করাটা কি অন্যায় হইছে? যদি অন্যায় হয়ে থাকে তাহলে এই স্কুলের এর আগে বহু অনিয়ম হইছে, এখনো যেসব অনিয়ম আছে তার তদন্ত করেন। যদি তদন্ত করে সেগুলা মিথ্যা পান তাহলে আমরা যারা মানবন্ধন করছি যা ইচ্ছা করেন। তিনি বলেন, পরে জানতে পারি তিনি নাকি মৎস অফিসার।
ভালুকা উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা সাইদুর রহমান এর এমন আচরনে চরম ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। ভুমিদস্যু, ধর্ষন এবং ভ্রূণহত্যার আসামী সাইফুল ইসলাম , তার জামাতা রমিজ খান, আবুল কালাম তালুকাদার দের পক্ষের হয়ে অন্যায় সুবিধা নিয়ে ভালুকা উপজেলা সিনিওয়র মৎস কর্মকর্তা সাইদুর রহমান সাধারণ মানুষের সাথে এমন আচরন কোন ভাবেই মানতে পারছেন না তারা। খুব শীঘ্রই এলাকাবাসী সাইদুর রহমান এর এই অপেশাদার আচরন এবং অনিয়ম নিয়ে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিবেন বলে জানা গেছে। যারা অনিয়ম দুর্নীতি করেছে তাদের আড়াল করে ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করা হলে আবার মানববন্ধন করবেন বলে জানান তারা।
সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, মানববন্ধন নিয়ে তদন্ত করতে আসবেন অথচ আমরা কেউই জানিনা। যাদের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের বাঁশ কাটা, জমি দখল এর অভিযোগ, যারা মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে নূপুর আক্তারকে হয়রানী করল সেই পক্ষের সবাইকে জানালেন অথচ আমরা সাধারণ মানুষ কিছুই জানতে পারলাম না। এটা কেমন তদন্ত।
এদিকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ভালুকা উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা সাইদুর রহমান এর স্বাক্ষরিত ব্ল্যাংক চিঠি বিতর্কিত শিক্ষিকা মাহমুদা, রমিজ, আলামিন গংদের মাধ্যমে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম উল্লেখ ছাড়াই বেশ কয়েকটি চিঠি ইতিমধ্যে এলাকায় অন্য একটি পক্ষের লোকজনের কাছে রয়েছে বলে জানা গেছে । এসব ব্ল্যাংক চিঠিতে নিজেদের পছন্দের লোকদের নাম বসিয়ে তাদের উপস্থিত থাকতে বলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যার একটি চিঠি প্রতিবেদকের কাছেও সংরক্ষিত রয়েছে।
দূর্নীতির প্রতিবাদ করা, প্রতিবাদে মানববন্ধন করা বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে কবে থেকে অপরাধ বলে গন্য হচ্ছে যে সে কারনে কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যাবেনা, প্রতিবাদ করলে রিমান্ডে যেতে হবে, একজন সরকারী কর্মকর্তার কাছ থেকে এমন আচরনে ক্ষুব্ধ সেখানে উপস্থিত লোকজন। অভিযোগ রয়েছে এই মৎস কর্মকর্তা একটি পক্ষের হয়ে কাজ করছেন, তিনি মানববন্ধনে অংশ নেয়া কাউকেই চিঠি দিয়ে ডাকেননি, ঘটনার দিন ফোন করে ডেকেছেন এবং অন্য পক্ষের লোকজনের সামনে তাদের হেয় করেছেন।
উক্ত তদন্ত কমিটির সদস্য উপজেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ফিলড সুপারভাইজার মোঃ শামীম হোসেন এর সাথে এলাকার লোকজন এর পক্ষ থেকে ইমরান নামে একজন কথা বললে তিনি বলেন, উক্ত তদন্তের ব্যাপারে স্বপ্রনোদিত হয়ে উপজেলার দুইজন বিতর্কিত শিক্ষা অফিসারের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে কোন তথ্য দিতে চাইলে তা আমলে নেওয়া হবেনা বলে জানান ।
তদন্তের বিষয়টি আগে থেকে জানিয়ে সর্বস্তরের জনসাধারনের উপস্থিতিতে করার কথা বললে তিনি এলাকায় মারামারির সৃষ্টি হতে পারে বলে ইংগিত দেন। কে বিশৃঙ্খলা করতে পারে এসব জানতে চাইলে তিনি প্রসংগ এড়িয়ে যান। এসময় বিশৃংখলা সৃষ্টি হলে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তা নেওয়ার কথা বললে তিনি তা সম্ভব না বলে আহবায়কের সাথে কথা বলতে বলেন।
এ ব্যাপারে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর না দিয়ে অফিসে এসে কথা বলতে বলেন। পরে একাধিকবার তার কাছ থেকে ফোনে সময় নিয়ে তার অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, উপজেলার দুই বিতর্কিত শিক্ষা কর্মকর্তা উপজেলা শিক্ষা অফিসার সৈয়দ আহমেদ এবং সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার দেলোয়ার হোসাইন এর অনিয়ম, দূর্নীতির প্রতিবাদে ও তাদের শাস্তির দাবিতে কিছুদিন আগে মানববন্ধন ও ঝাড়ু মিছিল করেছিলো ৭১ নং কাদিগড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমিদাতা, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। এমনকি সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন জুয়েল, জমিদাতা মাজিবুল হক তালুকদার সহ অন্তত ৪৬ জন অভিভাবক, এলাকাবাসী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে উপজেলার এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগও দিয়েছেন বলে জানা গেছে।