নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সংবাদ সন্মেলন করছে জাতীয় গনতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম। মঙ্গলবার বিকেল ৩:০০ ঘটিকায় এনডিএম’র প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন- ৭ই জানুয়ারী অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পুরো বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর গণতন্ত্রের দেশ হিসাবে তুলে ধরেছে। আবারো প্রমাণিত হয়েছে, কূটকৌশলে প্রকৃত বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে রেখে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে “আমি” আর “ডামি” মার্কা নির্বাচন করে জনগণের ম্যান্ডেট বিহীন আরেকটি কথিত সরকার বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণ করতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম এই প্রহসনের কথিত নির্বাচনকে প্রত্যাখান করছে। আমরা নির্বাচনে ঘটে যাওয়া অনিয়ম বা কারচুপির চেয়েও বেশি উদ্বিগ্ন কিভাবে নির্বাচনের নামে একটি প্রহসনকে রাষ্ট্রীয় মদদে মঞ্চস্থ করা হলো এবং এর সম্ভাব্য বৈশ্বিক প্রভাব কি সেটা নিয়ে।
পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াটি ছিলো প্রশ্নবিদ্ধ। নির্বাচন পরবর্তী বিদেশী সাংবাদিক এবং পর্যবেক্ষকদের সাথে মতবিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনে প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী বি
বিরোধী মহল থেকে সরকারের প্রলোভনে নির্বাচনে যাওয়া কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান ছাড়া দলটির সব প্রার্থী শোচনীয় পরাজয় বরণ করেছেন। দলটির চেয়ারম্যানকে জেতাতে একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চাপ সৃষ্টি করেছে বলে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগও জমা পড়েছিলো। নির্বাচনের দিন কক্সবাজার-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং বর্তমান সাংসদ অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচন বর্জনও করেছে। জয়ের দেখা পায়নি অংশ নেয়া ২৮টি রাজনৈতিক দলের ২৩টি, এমনকি এই দলগুলো কোথাও নূন্যতম প্রতিন্দ্বদ্বিতাও গড়ে তুলতে পারে নাই।
তিনি আরও বলেন নির্বাচনের এই চিত্র বলে দেয়, প্রধানমন্ত্রী জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচন হয়েছে বলে যে বক্তব্য রেখে চলেছেন তা সর্বৈব মিথ্যা এবং ভয়ংকর একধরণের প্রতারণা। এই নির্বাচন হয়েছে আওয়ামী লীগের ইচ্ছাধীন- সাজানো, পাতানো এবং খেলাধুলার নির্বাচন। নির্বাচনের মূল সংজ্ঞা হলো যথাযথ বিকল্প থেকে বেছে নেবার সুযোগ। নিরপেক্ষ নির্বাচন মানে শুধু নির্বাচনের দিন শান্তিপূর্ণ থাকা বা সঠিকভাবে ভোট গণণা নয়। অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন মানে প্রত্যেকটি প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল সারাবছর অবাধ রাজনৈতিক চর্চার সুযোগ পাবে, কালো টাকা এবং পেশীশক্তির প্রভাবমুক্ত নির্বাচন হবে, নির্বাচনের প্রচারে সবদল সমান সুযোগ পাবে, নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সরকারের কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় প্রভাবমুক্ত থাকবে, প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে এবং নির্বাচনের দিন ভোটারগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁদের ভোটের গুরুত্ব আছে এটা মনে করে ভোট দিবে এবং ভোটের ফলাফল ঘোষণা যথাযথভাবে হবে। এই প্রহসনের নির্বাচনে এই সবগুলো উপাদানই অনুপস্থিত ছিলো।
আমরা পশ্চিমাবিশ্বের কাছে আহ্বান জানাবো, বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের কথা চিন্তা করে আপনারা বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার মত কঠিন পদক্ষেপ না দিয়ে সরকারের উপর কূটনৈতিক চাপ অব্যাহত রাখুন, যাতে তাঁরা নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক সংলাপের উদ্যোগ নেয়। এই আহ্বান আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকটও। আমরা চাই, অবিলম্বে রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে একটি অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন। নতুন যে সরকার এবং সংসদীয় বিরোধী দল গঠিত হতে যাচ্ছে তাঁর প্রতি জনসমর্থন নেই বিধায় এই সরকারের বিকল্প হিসেবে আমরা সব বিরোধী রাজনৈতিক দল মিলে যদি একটি “ছায়া সরকার” গঠন করতে পারি তাহলে আমরা একটি “জনতার সংসদ” গড়ে তুলতে পারব।
আমরা স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির নিশ্চয়তা চাই। মিথ্যা এবং সাজানো মামলায় কারাগারে থাকা সকল রাজবন্দির মুক্তি চাই। আমরা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে জনগণ এবং তরুণ প্রজন্মের সহায়তা চাই। শান্তিপূর্ণ উপায়ে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। প্রত্যাশিত একটি নির্বাচন এবং জনগণের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তার দাবিতে লড়ে যাবে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম। ইনশাআল্লাহ্, বিজয় আমাদের হবেই।