নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ময়মনসিংহের ভালুকায় ভুমির পর এবার ভুমিদস্যু সিন্ডিকেটের কালো থাবা পড়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পুলিশের এক এস আইয়ের উপর। বিদ্যালয়টির জমি দখল, বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে নানা ভুয়া অভিযোগ, অপপ্রচার করে ক্রমাগত বিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পাঠদানের পরিবেশ বিনষ্ট এবং ওই পুলিশ কর্মকর্তা ও তার পরিবারের সুনাম নষ্ট করছে ওই ভুমিদস্যু সিন্ডিকেট।
উপজেলার কাচিনা ইউনিয়নের ৭১ নং কাদিগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে স্থানীয় ভুমিদস্যু সাইফুল ইসলাম যার বিরুদ্ধে ১৪ বছর আগে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের জীবিত দেখিয়ে নকল জমিদাতা সাজিয়ে ১৭ কোটি টাকা ব্যাংক লোন জালিয়াতি, শ্যালিকাকে ধর্ষণ ও ভ্রুন হত্যাসহ একাধিক মামলা আদালতে চলমান, ওই চক্রের আরেক সদস্য জুয়েল গংরা মেতে উঠেছে এমন নোংরা খেলায়। সাথে সহযোগী হিসেবে রয়েছেন কালাম তালুকদার নামে এক ব্যক্তি যে কিনা অন্যের জমি নিজের বলে চালিয়ে দেবার সময় সাধারন জনগন তাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলো, সেই সাথে মসজিদের টাকা এবং কাগজপত্র আত্মসাৎ করে এখন নিজেই এখন সমাজচ্যুত, নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবী করা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা মেছের আলী, সাইফুলের জামাতা রমিজ খান, রিপন তালুকদার, আলামিন প্রমুখ। সরকারী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ করেই চলেছেন এরা। সম্প্রতি স্বাভাবিক পানি প্রবাহে বাধা, জলাবদ্ধতার কারনে সৃষ্ট অনিশ্চয়তায় কমপক্ষে ১০ একর ফসলী জমি অনাবাদী থাকার আশংকা দেখা দিয়েছে। উপজেলার কাচিনা গ্রামের কাদিগড় গ্রামের চিহ্নিত ভুমিদস্যু সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে পুকুর খননের আড়ালে স্বাভাবিক পানি প্রবাহে বাধা দেয়ার এই অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে ভালুকা মডেল থানা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে দুটি পৃথক অভিযোগ দায়ের করেন।
ওই অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় মাস তিনেক আগে কাদিগড় স্কুল সংলগ্ন এলাকায় পুকুর খনন করে অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম। খননকৃত পুকুরের জমির উপর দিয়ে ওই এলাকার কমপক্ষে ১০ একর ফসলী জমির বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হতো। পুকুর খননকালে পাড় তৈরির সময় কোন ধরনের কালভার্ট বা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখেননি অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম এবং রমিজ খান। ফলে গেল কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ওই এলাকার অন্তত ১০ একর জমিতে ধান লাগানোর জন্য রোপণকৃত চারার জমি তলিয়ে যায়। কয়েকদিনেও পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় ওই চারা পঁচে নষ্ট হওয়ার আশংকা দেখা দিলে ভুক্তভোগী চাষীরা জমির মালিক সাইফুল ইসলামকে বারবার জানায়। কিন্তু কারও কোন কথায় পাত্তা না দিয়ে বরং নানা হম্বিতম্বি করতে থাকেন সাইফুল ও রমিজ। ওই এলাকার শফিকুল, আলমগীর, রেজাউল সহ বিভিন্ন কৃষকরা পুকুরের পাড়ের মধ্যে কালভার্ট দেয়ার জন্য সাইফুল ইসলামকে অনুরোধ করলেও কোন কাজ হয়নি। ওই এলাকার ৪ একর জমির মালিক, পুলিশ কর্মকর্তা সালেহ ইমরান নিজে বাদী হয়ে গত ২ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কার্যালয়ে ও ভালুকা মডেল থানায় ২টি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
সালেহ ইমরান ওই সময় প্রতিবেদককে জানান, যেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী না রাখার জন্য সবার প্রতি আহবান করছেন সেখানে সাইফুল ইসলামের মত চিহ্নিত ভুমিদস্যু পুকুর খননের আড়ালে বাধ দিয়ে মানুষের জমি জোর পূর্বক অনাবাদী রাখার পায়তারা করছে। সাইফুল তার জামাতা রমিজ খান, স্থানীয় আলামিন সহ আরও কিছু সহযোগীদের প্রত্যক্ষ মদদ ও সহযোগিতায় এই কাজ করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। দ্রুত এই সমস্যা নিরসনে প্রশাসনের সহযোগীতাও কামনা করেন তিনি।
এই অভিযোগ দায়েরের পর ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ভুমিদস্যু সিন্ডিকেটের সদস্যরা কাউন্টার অভিযোগ হিসেবে পুলিশ কর্মকর্তা সালেহ ইমরান ও তার স্ত্রী নুপুর আক্তার (ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) এর বিরুদ্ধে পাল্টা মিথ্যা অভিযোগ দেন যা সরেজমিন তদন্তে এবং শিক্ষা অফিস সূত্রে ইতিমধ্যেই মিথ্যা হিসেবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এমনকি উক্ত অভিযোগগুলি যখন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় কর্তৃক তদন্তাধীন ঠিক সেই সময় কিছু ভুঁইফোড় অনিবন্ধিত অনলাইনে মনগড়া তথ্য দিয়ে, বিকৃত বক্তব্য উপস্থাপন করে প্রকাশ করেন।
ভুমিদস্যু সিন্ডিকেট বিভিন্ন সময় নানাভাবে ওই এলাকার শান্তি শৃংখলা বিনষ্ট করতে বিভিন্ন জনকে নিয়ে এমন চক্রান্ত ষড়যন্ত্র প্রায়ই করে থাকেন বলে নিশ্চিত করেছে এলাকাবাসী সূত্র। এমনকি এবারের আজগুবি ও মিথ্যা অভিযোগ বিষয়ে বিভ্রান্ত করে কয়েকজন সাংবাদিকদের দিয়ে প্রশ্ন করতে গেলে স্থানীয় এক স্কুলের দপ্তরির হাতে প্রায় লাঞ্ছিত হওয়ার মত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিলো যার কারনও ছিলো ওই ভুমিদস্যু সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের কাউন্টার অভিযোগ এর ব্যাপারে যে সকল সাংবাদিকরা ঘটনা অনুসন্ধানে গিয়েছিলেন তাদের কয়েকজন ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে উল্লেখ করছেন যার প্রমাণ এই প্রতিবেদকের হাতে আছে। এছাড়া রমিজ খান গং কর্তৃক বিদ্যালয় এবং পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানহানি করার জন্য সাংবাদিকদের ব্যবহার করছেন বলেও কয়েকজন সাংবাদিক এর এমন বক্তব্য এই প্রতিবেকের কাছে আছে।
সরেজমিনে এই চক্রের অভিযোগ এর ব্যাপারে এলাকায় খোজ নিয়ে জানা গেছে, এসআই সালেহ ইমরান কে নিয়ে যে জমি জবরদখল এবং আত্মসাৎ এর অভিযোগ করা হয়েছে সেটি স্কুলের পাশেই একটি মসজিদ এবং মাদ্রাসার জমি। দীর্ঘ ৬০ বছর যাবত উক্ত জমি মসজিদ এবং মাদ্রাসা ভোগ দখলে আছে৷ উক্ত জমি নিয়ে মসজিদ এবং মাদ্রাসার পক্ষ থেকে সালেহ ইমরানের প্রতি কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
সরেজমিনে বিদ্যালয় পরিদর্শন করে কয়েকজন অভিভাবক এর সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের পরিবেশ অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় অত্যন্ত ভালো। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কিছুদিন আগে বিদ্যালয় পরিদর্শন করে বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ্টি প্রকাশ করেছেন বলে উক্ত সময় বিদ্যালয়ে উপস্থিত একাধিক অভিভাবক জানিয়েছেন। পুলিশ কর্মকর্তা এসআই সালেহ ইমরানের ব্যাপারে এলাকায় খোজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি বিভিন্ন সময়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় ভূমিদস্যুদের রোষানলের স্বীকার হয়েছেন। এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের বিষয়ে তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে৷
এ বিষয়ে সাইফুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করলেও তার মেয়ে জামাতা রমিজ খান মোবাইল ফোনে প্রতিবেদকের সাথে হম্বিতম্বি করেন, নানা ধরনের অসংলগ্ন ও অপ্রাসঙ্গিক কথা বলেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সালেহ ইমরান কর্তৃক যে অভিযোগ গুলি করা হয়েছে তার ভিত্তিতে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদুল আহমেদ জানিয়েছেন, অভিযোগের বিষয়ে একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তদন্ত করে খুব শীঘ্রই রিপোর্ট জমা দিবে৷
এই বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ আহমদ জানান, এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত সম্পূর্ণ হওয়ার পর বিস্তারিত বিলা যাবে। তবে প্রাথমিক তদন্তে আমার কাছে মনে হয়েছে, বিদ্যালয়ের জমি কারও দখলে নয় বরং বিদ্যালয়ের দখলেই রয়েছে এবং পুরাতন ভবন ভেঙে দুতলা ওয়াশ ব্লক নির্মানের সিদ্ধান্ত শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী নিয়মতান্ত্রিক ভাবেই হয়েছে।