ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ
অভিযোগের ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও বিতর্কিত শিক্ষিকা মাহমুদা পারভীনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত করেননি টিইও সৈয়দ আহমদ। বরং উল্টো সেই মাহমুদাকেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে পুরষ্কৃত করেছেন তিনি। শিক্ষা অফিসের এমন সমর্থন ও সহযোগিতায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বিতর্কিত শিক্ষিকা মাহমুদা পারভীন। তার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ করলেও তার কোনটিই আলোর মুখ দেখেনি। মাহমুদা পারভীনের অনৈতিক কর্মকান্ডের ফিরিস্তি পর্ব ১।
অভিযোগ উঠেছে ময়মনসিংহের ভালুকার ৭১ নম্বর কাদিগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত মাহমুদা পারভীন নামে সাবেক ভারপ্রাপ্ত ওই প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আনীত গুরুতর বিভিন্ন অভিযোগের ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও কোন ব্যবস্থা নিতে নারাজ উপজেলার বিতর্কিত টিইও সৈয়দ আহমদ। ২০২০ সালে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট ব্যবহার করে একজনকে দাতা হিসেবে উপস্থাপন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনাকে উপেক্ষা করে গোপনে কমিটি গঠনের পাঁয়তারা, নজিরবিহীন আর্থিক দূর্নীতি, অন্যায়ভাবে অভিভাবকদের ভোটার তালিকার বাইরে রাখা, কেউ কোন কিছু জানতে চাইলে তথ্য অধিকার আইন দেখিয়ে তা পাশ কাটিয়ে যাওয়াসহ নানা গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মাহমুদা পারভীনের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া দূরে থাক কোন তদন্ত কমিটি হয়নি, ফলে হয়নি তদন্তও।
বিদ্যালয়ের অভিভাবক, দাতা সদস্য ও এলাকাবাসী স্বাক্ষরিত দুই বছর আগের সেই অভিযোগের কোন তদন্ত না করে বিতর্কিত শিক্ষিকা মাহমুদা পারভীনকেই পুনরায় দায়িত্বে বহাল করায় ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকাবাসী।
অভিযোগ রয়েছে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এলাকাবাসী, শিক্ষক, অভিভাবক, দাতা সদস্যদের আবেদনকে উপেক্ষা করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার জন্যই মাহমুদা পারভীনকে দায়িত্ব দিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ আহমদ।
২০২০ সালে উপজেলা শিক্ষা অফিসে এলাকাবাসীর দেয়া অভিযোগ থেকে জানা যায়, ওইসময় স্কুলের অর্থনৈতিক কেলেংকারী, কমিটি গঠনে ব্যাপক কারচুপি, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসকে অবমূল্যায়ন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করা, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় বিমুখ করাসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ছিল মাহমুদা পারভীন। সেই সমস্ত অভিযোগ থেকে বাঁচতে ব্যক্তিগত অসুস্থ্যতার অজুহাত দেখিয়ে ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির আবেদন করেছিল মাহমুদা পারভীন। এরপর তাকে অব্যাহতি দেয়া হলেও গত ৩ বছরে আজও সেইসমস্ত অপরাধের কোন তদন্ত বা শাস্তি নিশ্চিত করতে পারেনি উপজেলা শিক্ষা অফিস।
এমনকি মাহমুদা পারভীন স্থানীয় মেছের আলী নামে এক ব্যক্তিকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দেখিয়ে উপজেলা শিক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবুল কালাম আজাদ সাহেবের কাছে দাতা সদস্যের সুপারিশ করেছিলেন। পরে সেই জালিয়াতি ধরা পড়ায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ তাৎক্ষনিক তা বাতিল করেন।
এ নিয়ে তৎকালীন শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা তদন্ত শুরুর পর সরকারি নিয়মে বদলী হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমান ভালুকা উপজেলা শিক্ষা অফিসার সৈয়দ আহমেদ দায়িত্বে আসার পর অনৈতিক সুবিধা নিয়ে মাহমুদা পারভীনের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে মাহমুদাকেই পুনরায় দায়িত্ব প্রদান করে পুরষ্কৃত করেছেন কিনা এই প্রশ্ন এলাকাবাসীর।
অভিযোগের বিষয়ে মাহমুদা পারভীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বক্তব্য দিতে রাজি হননি। বলেন, এ বিষয়ে টিইও সাহেব ভালো বলতে পারবেন। পরে উপজেলা শিক্ষা অফিসার (টিইও) সৈয়দ আহমদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তিনিও বক্তব্য দেননি।
উপজেলা শিক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ও ভালুকা উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, দাতা সদস্য হিসেবে মনোনয়নের সময় মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট জাল পাওয়ায় তিনি তা বাতিল করে দিয়েছিলেন। কাদিগড় স্কুল নিয়ে অনিয়ম বা দূর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষক পদের জন্য সিনিয়র বা জুনিয়র কোনো বিষয় না। দায়িত্ব পালনে যোগ্যতাই মূল কথা। তবে মাহমুদা পারভীনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।