সংবাদ শিরোনাম ::
সিরাজগঞ্জে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ন্যায্য মূল্যের ৭ টন চালসহ আটক ২ চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নে বিএনপির কর্মীসভা অনুষ্ঠিত মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও হচ্ছেনা সিরাজগঞ্জ জেলা বাস মালিক সমিতির নির্বাচন আটপাড়া উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব টিটু ভুঁইয়ার জন্মদিনে বৃক্ষ রোপন আটপাড়ার তেলিগাতী সরকারি কলেজের মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত তাড়াশে ৯০ দশকের জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের মতবিনিময় এনায়েতপুরে পুলিশ হত্যা মামলায় আ’লীগ-যুবলীগের দুই নেতা গ্রেপ্তার খেজুর গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত চলনবিলের গাছিরা তাড়াশে দ্বিতীয় বিয়ের প্রতিবাদ করায় প্রথম স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা ঘাতক স্বামী আটক চৌহালীতে সরকারি মাটি ভরাটকৃত রাস্তা দখল করে দোকানঘর নির্মাণ

বিন্নাফুলে চলে নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের সংসার

  • প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:৩৯:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৬০ বার পড়া হয়েছে

সাব্বির মির্জা, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর এলাকায় প্রায় ২০ হাজার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করেন। এদের মধ্যে ওঁরাও, মাহাতো, রাজবংশী, বিদাস, সিং, কনকদাস ও স্বল্প সংখ্যক সাঁওতাল সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ রয়েছেন।

চলনবিল অধ্যুষিত পল্লী কালীবাড়ি গ্রামের গৃহিনী আশা বালা ওঁরাও, শান্তিবালা ওঁরাও ও মিনতি ওঁরাও সাত সকালে সংসারের কাজ সেরে নিত্য দিনের ন্যায় বের হয় অন্য কাজের সন্ধানে। ওদের সংসার এখন টানা টানিতে চলছে। জানা যায়, এক সময় এসব সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ বন-জঙ্গলে ঘুরে শিয়াল, খরগোশ, কচ্ছপসহ বিভিন্ন পশু-পাখি শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে বন-জঙ্গল উজাড় হয়ে যাওয়ায় তাদের জীবিকা নির্বাহে ভাটা পড়েছে।

তাই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী-পুরুষরা এখন কৃষি কাজে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছেন। তারা মাঠে ধান লাগানো, ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করে থাকেন। তারা কঠোর পরিশ্রমি এবং অপেক্ষাকৃত কম পারিশ্রমিক হওয়ায় এলাকায় কৃষি কাজে তাদের বেশ চাহিদাও রয়েছে। কিন্তু আশ্বিন-কার্তিক মাসে এলাকায় তাদের হাতে তেমন কোন কাজ থাকে না। ফলে রোজ উপার্জন করতেও পারেন না তারা। তাই এ সময় উপার্জনের জন্য বেছে নেন বিন্না ফুল তোলার কাজ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বিন্না ফুলের আঁটি বেঁধে সেগুলো শুকিয়ে তৈরি করে ঝাড়–। তাদের তৈরি ঝাড়– বিক্রি করে বিভিন্ন হাটে-বাজারে ও গ্রাম এলাকায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে। অবশ্য এ কাজটি নারীদের পাশাপাশি এখন পুরুষেরাও করে থাকেন। আর এভাবেই কেটে যায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীদের সময়। আর এ অবস্থা চলছে অধিকাংশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারে।

তাড়াশ উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীরা দল বেঁধে রাস্তার পাশে কিংবা পরিত্যক্ত ভিটেতে থাকা বিন্নাফুল সংগ্রহ করেন, রোদে শুকান, কেউ আঁটি বেঁধে বাড়িতে নিয়ে যান। বিন্নাফুল দিয়ে তৈরি করছেন ঝাড়–। জ্যোতিষ মাহাতো জানান, এরা প্রতিটি ঝাড়– ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি করে। আর ব্যাপারীরা এদের নিকট থেকে ঝাড়– সংগ্রহ করে শহরে এনে প্রতিটি ঝাড়– বিক্রি করে ৫০-৬০ টাকায়।
ফুল তুলতে নিমগাছি থেকে আশা নারী সাবিত্রী বালা সিং বলেন, বর্ষার শেষে আশ্বিন মাসে এলাকায় তেমন কোনো কাজ থাকে না। এ সময় কষ্ট করে সংসার চালাতে হয়। তাই বসে না থেকে উর্পাজনের জন্য বিন্নাফুল দিয়ে ঝাড়– বানিয়ে বিক্রি করে থাকি।

তাড়াশ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস হোসেন শেখ জানান, সমাজসেবা অধিফতরের মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ জীবনমান উন্নয়নে সরকারিভাবে বিভিন্ন ভাতা পেয়ে থাকেন। আর অস্বচ্ছল পরিবারের স্কুল-কলেজ পড়–য়া ছেলে-মেয়েরা এককালীন অর্থ ও উপবৃত্তি পেয়ে থাকে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ অত্যন্ত পরিশ্রমি ঝাড়– তৈরি এবং বিক্রি করে এ সম্প্রদায় অনেকটাই লাভবান হন।

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
DNB News

সিরাজগঞ্জে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ন্যায্য মূল্যের ৭ টন চালসহ আটক ২

বিন্নাফুলে চলে নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের সংসার

আপডেট সময় : ১২:৩৯:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সাব্বির মির্জা, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর এলাকায় প্রায় ২০ হাজার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করেন। এদের মধ্যে ওঁরাও, মাহাতো, রাজবংশী, বিদাস, সিং, কনকদাস ও স্বল্প সংখ্যক সাঁওতাল সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ রয়েছেন।

চলনবিল অধ্যুষিত পল্লী কালীবাড়ি গ্রামের গৃহিনী আশা বালা ওঁরাও, শান্তিবালা ওঁরাও ও মিনতি ওঁরাও সাত সকালে সংসারের কাজ সেরে নিত্য দিনের ন্যায় বের হয় অন্য কাজের সন্ধানে। ওদের সংসার এখন টানা টানিতে চলছে। জানা যায়, এক সময় এসব সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ বন-জঙ্গলে ঘুরে শিয়াল, খরগোশ, কচ্ছপসহ বিভিন্ন পশু-পাখি শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে বন-জঙ্গল উজাড় হয়ে যাওয়ায় তাদের জীবিকা নির্বাহে ভাটা পড়েছে।

তাই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী-পুরুষরা এখন কৃষি কাজে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছেন। তারা মাঠে ধান লাগানো, ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করে থাকেন। তারা কঠোর পরিশ্রমি এবং অপেক্ষাকৃত কম পারিশ্রমিক হওয়ায় এলাকায় কৃষি কাজে তাদের বেশ চাহিদাও রয়েছে। কিন্তু আশ্বিন-কার্তিক মাসে এলাকায় তাদের হাতে তেমন কোন কাজ থাকে না। ফলে রোজ উপার্জন করতেও পারেন না তারা। তাই এ সময় উপার্জনের জন্য বেছে নেন বিন্না ফুল তোলার কাজ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বিন্না ফুলের আঁটি বেঁধে সেগুলো শুকিয়ে তৈরি করে ঝাড়–। তাদের তৈরি ঝাড়– বিক্রি করে বিভিন্ন হাটে-বাজারে ও গ্রাম এলাকায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে। অবশ্য এ কাজটি নারীদের পাশাপাশি এখন পুরুষেরাও করে থাকেন। আর এভাবেই কেটে যায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীদের সময়। আর এ অবস্থা চলছে অধিকাংশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারে।

তাড়াশ উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীরা দল বেঁধে রাস্তার পাশে কিংবা পরিত্যক্ত ভিটেতে থাকা বিন্নাফুল সংগ্রহ করেন, রোদে শুকান, কেউ আঁটি বেঁধে বাড়িতে নিয়ে যান। বিন্নাফুল দিয়ে তৈরি করছেন ঝাড়–। জ্যোতিষ মাহাতো জানান, এরা প্রতিটি ঝাড়– ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি করে। আর ব্যাপারীরা এদের নিকট থেকে ঝাড়– সংগ্রহ করে শহরে এনে প্রতিটি ঝাড়– বিক্রি করে ৫০-৬০ টাকায়।
ফুল তুলতে নিমগাছি থেকে আশা নারী সাবিত্রী বালা সিং বলেন, বর্ষার শেষে আশ্বিন মাসে এলাকায় তেমন কোনো কাজ থাকে না। এ সময় কষ্ট করে সংসার চালাতে হয়। তাই বসে না থেকে উর্পাজনের জন্য বিন্নাফুল দিয়ে ঝাড়– বানিয়ে বিক্রি করে থাকি।

তাড়াশ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস হোসেন শেখ জানান, সমাজসেবা অধিফতরের মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ জীবনমান উন্নয়নে সরকারিভাবে বিভিন্ন ভাতা পেয়ে থাকেন। আর অস্বচ্ছল পরিবারের স্কুল-কলেজ পড়–য়া ছেলে-মেয়েরা এককালীন অর্থ ও উপবৃত্তি পেয়ে থাকে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ অত্যন্ত পরিশ্রমি ঝাড়– তৈরি এবং বিক্রি করে এ সম্প্রদায় অনেকটাই লাভবান হন।